
ডেস্ক রিপোর্ট- ৯৩ জন রোহিঙ্গা নিয়ে মালয়েশিয়াগামী একটি নৌকা আটক করেছে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষ। রবিবার (২৫ নভেম্বর) নৌকাটি আটক করা হয়। মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) দেশটির এক সরকারি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স খবরটি জানিয়েছে। এ বছর শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার পর থেকে এ নিয়ে মালয়েশিয়াগামী তৃতীয় নৌকা আটক করলো মিয়ানমার নৌবাহিনী।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। সম্প্রতি জাতিসংঘের প্রতিবেদনে রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনায় মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে দায়ী করা হয়েছে। এছাড়া বেসামরিক সর্বোচ্চ নেতা অং সান সু চিরও সমালোচনা করে বলা হয়েছে রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞ ঠেকাতে নিজের নৈতিক অবস্থান ও রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা প্রয়োগ করতে ব্যর্থ হয়েছেন তিনি।
মিয়ানমারে নাগরিকত্বহীন অসহায় রোহিঙ্গাদের কেউ কেউ সাগরপথে থাইল্যান্ড ও মালয়েশিয়ায় পাড়ি দেওয়ার চেষ্টা করে থাকে। বিশেষ করে নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত শুষ্ক মৌসুমে সাগর যখন শান্ত থাকে তখন তারা নৌকায় করে এসব দেশে যাওয়ার চেষ্টা করে। অনেকসময় মানবপাচারকারীদের খপ্পড়ে পড়তে হয় তাদের।
মঙ্গলবার (২৭ নভেম্বর) দক্ষিণাঞ্চলীয় মিয়ানমারের উপকূলীয় শহর দাউই-এর সরকারি অফিসের পরিচালক মোয়ে জ লাত জানান, জেলেরা একটি ‘সন্দেহজনক’ নৌকার কথা কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছিল। রবিবার মিয়ানমারের নৌবাহিনী নৌকাটি থামিয়ে ৯৩ জনকে আটক করে। আটককৃতরা জানিয়েছে, তারা রাখাইন রাজ্যের সিত্তে শহরের থায়ে চাউং ক্যাম্প থেকে এসেছে। দাউই-এর প্রায় ৯০০ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে থায়ে চাউং-এর অবস্থান। এলাকাটিতে মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বাস্তুচ্যুতরা থাকে, যাদের বেশিরভাগই রাষ্ট্রীয় পরিচয়হীন রোহিঙ্গা।
দাউই-এর সরকারি অফিসের পরিচালক মোয়ে জ লাত বলেন, ‘তারা (আটককৃতরা) ক্যাম্প থেকে পালিয়ে আসার কথা জানিয়েছে। মালয়েশিয়ায় যেতে চেয়েছিল বলে জানিয়েছে তারা।’
উল্লেখ্য, প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে রোহিঙ্গারা রাখাইনে থাকলেও মিয়ানমার তাদের নাগরিক বলে স্বীকার করে না। উগ্র বৌদ্ধবাদকে ব্যবহার করে সেখানকার সেনাবাহিনী ইতিহাসের বাঁকে বাঁকে স্থাপন করেছে সাম্প্রদায়িক অবিশ্বাসের চিহ্ন। ছড়িয়েছে বিদ্বেষ। ৮২-তে প্রণীত নাগরিকত্ব আইনে পরিচয়হীনতার কাল শুরু হয় রোহিঙ্গাদের। এরপর কখনও মলিন হয়ে যাওয়া কোনও নিবন্ধনপত্র,কখনও নীলচে সবুজ রঙের রশিদ,কখনও ভোটার স্বীকৃতির হোয়াইট কার্ড, কখনও আবার ‘ন্যাশনাল ভেরিফিকেশন কার্ড’ কিংবা এনভিসি নামের রং-বেরঙের পরিচয়পত্র দেওয়া হয়েছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষকে। ধাপে ধাপে মলিন হয়েছে তাদের পরিচয়। ক্রমশ তাদের রূপান্তরিত করা হয়েছে রাষ্ট্রহীন বেনাগরিকে। ২০১২ সালে রাখাইনে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে সমুদ্র পথ পাড়ি দিয়ে মিয়ানমার ছেড়ে পালায় হাজার হাজার রোহিঙ্গা। এই পালানো ২০১৫ সালে চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। সে বছর আন্দামান সাগর পাড়ি দিয়ে ২৫ হাজার রোহিঙ্গা থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া পৌঁছায়। অনেকেই অতিরিক্ত যাত্রীবাহী সেসব নৌকা ডুবে সমুদ্রেই প্রাণ হারান।
পাঠকের মতামত